বানারীপাড়া থেকে মো. মুনতাসির খান:
হোগলা পাতা গ্রামগঞ্জ শহর বন্দরের সকলের কাছে পরিচিত থাকলেও, এর কদর শুধু নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে ছিলো। দেশ উন্নয়নের সিঁড়িতে আহরণের ফলে এর চাহিদা আর নাই। অবস্থাসম্পন্ন মানুষ এগুলোকে চিনলেও তাদের কোন কাজে আসে না। তারা কাজে লাগান না। এখন দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের ঐতিহ্যের হোগলা শিল্পের প্রতি তেমন কোন দরদ নেই। কালের বিবর্তনে এ শিল্প এখন শেষের পথে। এক সময় গ্রামের প্রত্যেক ঘরেই হোগলা পাতার তৈরি তৈজষপত্র দেখা যেত। দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষ তাদের দৈনন্দিন প্রয়োজনে মক্তব, মসজিদ, মাদ্রাসা ও বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে ব্যবহার করতো। হোগলা পাতার তৈরি শীতল পাটি ছিলো অনেকের পছন্দের। বিশেষ করে গ্রামের সকল পেশার মানুষ খাওয়া, নামাজ ও ঘুমানোর কাজেও এই পাটির ব্যবহার করতো। বিদ্যুৎবিহীন এলাকায় তীব্র গরমে মানুষের হোগলা পাতার হাতপাখা ছিল নিত্য দিনের সঙ্গী। কিছু জনগোষ্ঠী খÐকালীন আয়ের উৎস হিসাবে হোগল পাতার কুটির শিল্পের ওপর নির্ভর ছিলো। তারা নদী, খাল ও ঝিলের কিনারা থেকে প্রাকৃতিক উপায়ে জন্মানো এই জলজ উদ্ভিদ সংগ্রহ করে রোদে শুকিয়ে তা স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে জীবনযাপন করত। কেউ কেউ এই বাজার থেকে এই জলজ উদ্ভিদ অর্থাৎ হোগল পাতা কিনে গ্রামীণ কুঁড়ে ঘরের বেড়া, ফসলের ক্ষেতে বেড়া, ঘরের ছাউনি ও ফসল রাখার টুকরি কাজে ব্যবহার করত। আবার গ্রামের নারীরা বাড়তি আয়ের উৎস হিসাবে কোমল ও নরম পাতা আলাদা করে তা দিয়ে শীতল পাটি, হাতপাখা, নামাজের মাদুর, কুশন, ঝুড়ি, টুপি ও টুকরিসহ নিত্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরি করে বাজারে বিক্রি করত। একসময় এসব পণ্য শহরের অনেক মানুষকে ব্যবহার করতে দেখা যেত। প্রাকৃতিকভাবে লদ্ধ উপকরণগুলিকে উপযোগবাদী পণ্যে পরিণত করার সহজ দক্ষতা প্রাচীন সভ্যতার পর থেকে চলে এসেছে। কিন্তু এখনও ব্যবহারযোগ্য সকল সম্ভাবনার জন্য বাংলাদেশ সঠিক উদ্যোগের অপেক্ষা করছে।
পিরোজপুর, তুষখালী, পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলা, ঝালকাঠী, বানীপাড়া, উজিরপুর, মোড়েলগঞ্জ, ভান্ডারিয়া, মটবাড়ির কিছু কিছু এলাকা ঘুরে দেখা গেছে এলাকাবাসী এখনও হোগলা পাতা ব্যবহার করছেন। তবে তাদের দাবি সরকার যদি আমাদের এবং এই শিল্পকে পৃষ্টপোষকতা দেন তা হলে হোগলার হারানো ঐতিহ্য আবার ফিরে পাওয়া সম্ভব। নদীর কিনারে, চরে, ডোবা, নালা ও জলাশয়ে জন্মে এ হোগলা গাছ। নোনা জলের গাছ হোগলা পাতা দিয়ে তৈরী কুটিশিল্প বিদেশে রফতানি করে বৈদেশিক অর্থ উপার্জন করা সম্ভব। কারণ এই কুটির শিল্প উন্নত দেশে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বানারীপাড়া উপজেলার সোনাহার গ্রামের আবুল কাশেম বলেন, যদি হোগলা ম্যাটগুলি ঐতিহ্যবাহী পণ্য হিসেবে বিবেচিত হতো। তা হলে গ্রামের বেকার যুবক-যুবতীরা এতে আত্মনিয়োগ করতো। তবে মানুষ দিন দিন হোগলার ব্যবহার কমিয়ে দিচ্ছে। তিনি আরো বলেন, ঐতিহ্যবাহী এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে সরকারের সুদৃষ্টি দেয়া উচিত। হোগলা জেনার স্পারগানিয়াম টাইফা প্রজাতির উদ্ভিদ। হোগলা একটি বহুবর্ষজীবি, একজবীজপত্রী, উভয়লিঙ্গ, বাতাসে পরাগায়িত, হার্ব জাতীয় গাছ।