ঢাকাসোমবার , ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪

মহা প্রলয়ের আস্তরণ

প্রতিবেদক
admin
ডিসেম্বর ৩০, ২০২৪ ১১:১৭ পূর্বাহ্ণ

কোথাও কিছু দেখা যাচ্ছে না। আকাশ, পাতাল, গাছপালা, পাহাড়, পর্বত, নদী, সাগর ও বনবাদর কিছুতো চোখে পরছে না। চারদিকে যেন কোলাহল ভূতুরে অবস্থা বিরাজ করছে। কখনো কখনো ঝিঁঝিঁ পোকার শব্দের মতো কি যেন কানের মধ্যে প্রবেশ করছে। আকাশ বলতেও কিছু টের পাওয়া যাচ্ছে না। কোথায় যে এসেছি কিছু অনুভবে নেই আমার। কখনো হাটতে থাকছি, কখনো বসে থাকছি, কখনো হাওয়ায় ভেসে বেড়াচ্ছি। আবার কখনো যে পাখায় ভর করে দূর থেকে দূরন্তে যাচ্ছি, কেন? কিছুই জানিনা। অনেক চিন্তা করছি কিন্তু কিছুই তো মনের মধ্যে থাকছে না। কোথায় ছিলাম, কি করছিলাম, কিভাবে এখানে এসেছি বুজতে পারছি না। কাউকে দেখছি না, তবে কোথাও যে কিছু আছে তা অনুভব করছি।
মাঝে মাঝে ভয়ের মধ্যে ডুবে যাই। আবার কখনো কখনো বেশ ভালো লাগে নিজেকে ফ্রেশ মনে হচ্ছে। কারো সাথে কথা বলবো, কাউকে দেখবো? অনেকের উপস্থিতি টের পেলেও কাউকে দেখছি না। কি আর করা। মনে যা চায় তাই করছি। একবার আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছি। আবার বসে বসে হাওয়া খাচ্ছি। একটা বিষয় লক্ষ্য করছি ক্ষুদা-তৃষ্ণা নেই। নাক দিয়ে যে বাতাস নিচ্ছি তাও বুঝতে পারছি না। যেহেতু ক্ষুদা ও তৃষ্ণা নেই সেহেতু কোন বাথরুমও নেই। যাক বেঁচে গেছি বাথরুমের কাজ করতে হয় না। এবার বসে বসে ঝিমুনি আসলো, চোখ বুঝেছি কিনা জানতে পারিনি। ঘুম বলতে যে কি তা টের পাচ্ছি না। এসব নানা চিন্তাভাবনা করতে করতে অনেক সময় অতিবাহিত হলো তা অনুমেয়।
কি আর করা। কোথাও কোথাও সারাশব্দ পাচ্ছি, তবে কাউকে দেখতে পাচ্ছি না। যা আগে একবার বলেছি। এক সময় বুঝতে পারলাম আমার যে ঘোরাফেরা করছি তাতে অনেক সময় পার হয়ে গেলো। কত সময় তা একবার মনের মধ্যে ধারণা দেয়, আবার চলে যায়। এসব ভাববে ভাবতে বুঝতে পারলাম এখানে আমি ঘোরাফেরা করছি লাখো বছর হবে? তবে স্থানটা কোথায় তা বলতে এখনো। অবশেষে জায়গাটার নাম আমি জানতে পেরছি অবচেতন মনে। এ সীমাহীন স্থানটি হয়তো ‘অরিয়ন নেবুলা’। এই নেবুলা, কে বানিয়েছে জানিনা, আমার ঘোরাঘুরির কাজ ঘুরছি। এক সময় ভাবলাম নেবুলাটি আর থাকবে না। তার সময় শেষ হবে হবে বলে মনে হচ্ছে। কি আর করবো বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছি। মন যা চাইছে তাই করছি। বলার বা দেখার কেউ নেই। তবে নেবুলার পেছনে যে কেউ আছে তা বুজতে পারছি।
লাখো বছর পার হবার পর দেখছি অন্য কোথাও যেন এসেছি। এখানকার নিয়ম-কানুন ভিন্ন রকম। এবার এসেছি অন্য এক জায়গা যার নাম আর্কিট্রাসে। আগে নেবুলায় যা যা ছিলো এখানে তার ঠিক অন্যটা। নেবুলায় চলাফেরায় যে সহজ পদ্ধতি ছিলো এখানে তা কিছুটা নিয়ন্ত্রিত। আমার কোন অসুবিধা হচ্ছে না। তবে খাওয়া দাওয়া যে করতে হয় না তা ঠিক রয়েছে। কোন কাজ নেই, ভাবনা নেই, খাবার নেই, ক্ষুদা নেই এসব এখানেও বিদ্যমান।
হাজারো বছর পর মনে হলো এখানেও থাকা যাবে না। কোথাও আমাকে আবার যেতে হতে পারে। ভাবখানা এরকম মনে হচ্ছিল। কি আর করার হাওয়ায় ভেসে ভেসে দেখছি আর বেড়াচ্ছি। কোন সাথী নেই, কারো সাথে যে গল্পস্বল্প করবো তারও উপায় নেই। এরকম চলতে চলতে আবারো বহু বছর পার হয়ে গেলো।
এবার আবার আমাকে পাঠানো হলো অন্য এক স্থানে। কে যে আমাকে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পাঠায় বুঝতেই পারছি না। তবে আমার যে কোন কাজ নেই তা বুজতে পারছি। অনেকটা সময় পার হওয়ার পর, এবার আসলাম অন্য জায়গায়। এখানে আগের চেয়ে নিয়ম-কানুন একটু বারতি। কোথাও কোথাও কিছু কিছু জিনিসপত্র দেখা যায়, মনে হচ্ছে যেন দূর দেশে পাহাড়ের মতো আকৃতি রয়েছে। সাগরের ঢেউয়ের মতো কি যেন দেখা যায়। এবার বুঝতে পারছি এ স্থানের নাম নেপচুন। এখানে এসেতো মহাবিপদে পড়েছি। কি করবো কোথায় থাকবো কি খাবো বুঝতে পারছি না। তবে এর আগে যেখানে থাকতাম সেখানকার চেয়ে এখানের অবস্থা কিছুটা গোছানো। নিয়ম কানুন কিছু লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তবে যা বলছিলাম খাওয়ার চিন্তা! না। খাওয়ার কোন ঝামেলা নেই। কারণ খাবার নেই, খেতেও হচ্ছে না। তাই বাথরুম বা অন্য কিছু করার তো প্রশ্ন আসে না। শীতল শীতল হাওয়ায় ঘুরছি, তবে শীতের কোন পোশাক পড়তে না। আসলে আমার কোন পোশাকই নাই। কোন পোশাক মানায় না। যা আছে তাই যথেষ্ট। কেউ তো আমাকে দেখছে না। তবে কেউ দেখলে দেখতে পারে। আমি কিন্তু কাউকে দেখছি না। আমার মনে হচ্ছে কে যেন আমাকে পর্যবেক্ষণ করছে। মানে সিসি ক্যামেরা দিয়ে আমার সব কিছু রেকর্ডিং করা হচেছ। করুক। সমস্যা কি, কোন দায়-দায়িত্ব নেই, যা ইচ্ছে তাই করুক।
আমি রুহানি। আমার কি বা করার আছে। ওড়তে ওড়তে বা হাওয়ায় হাওয়ায় ভেসে অনেকটা দূর এগোচ্ছি। তার ওড়া থামছিলো না কখনো। হাজারো বছর পর আবারো এক অচেনা জায়গায় আসলো রুহানি। এবার আগের চেয়ে তার অবস্থা কিছুটা বেটার লাগছে। তবে চিন্তা-চেতনা ঠিক হয়নি। কিসের জন্য এসেছেন, কি করবেন, খেতে হবে কিনা এসব নিয়ে কোন ভাবনাই তার মধ্যে নেই। খাওয়া-দাওয়া প্রসাব-পায়খানা তার তো কোন কিছুই করতে হয়না। কিন্তু রুহানি ভাবছে তার একটা সত্ত¡া আছ তা ঠিক। কিন্তু তার মধ্যে কোন চেতনা নাই। কি আর করা। অনেক দূর এগোলো বুঝতে পারছে আবারো সে এক নতুন যে জায়গায় এসেছে। এই জায়গাটি হলো ভেগাস্টার।
রুহানি ভেগাস্টারের চলতে চলতে কাউকে অনুভব করলো। অনুভব করলো ঠিকই কিন্তু তাকে দেখা যায় না। যার সাথে তার প্রথম ভাব বিনিময় হলো সে জানালো তোমার পক্ষে আমাকে দেখা সম্ভব হবে না। আমার অবয়ব দেখার চোখ তোমার নাই, বুদ্ধি, মেধা ও সাহসও নাই। আমাকে কল্পনা করে দেখতে পারা সম্ভব সে জন্য তোমাকে আমার নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হবে। এসব কথা রুহানির মাথায় ঠুকছে না। কি কি বলছে, কে বলছে কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না রুহানি। রুহানি তো নিজের চেহারাও দেখে না, সে অনুভব করতে পারে তার অস্তিত্ত¡ আছে। এছাড়া কিছুই না।
এভাবে দিনে পর দিন চলে যেতে লাগলো। কতো দিন কি সময় অতিবাহিত হচ্ছে তার কোন ধারনা কারো নেই। রুহানি তো কাউকে দেখছেও না পাচ্ছেও না। কাকে কি জিজ্ঞেস করবে? রুহানি তো নিজেকেই চেনেনা। শুধু অনুভব করে যে আমি কিছু একটা আছি। নিজেকে রুহানি স্পর্শ করতেও পারছে না, শুধু অনুভবে ভেসে ভেসে চলছে লাখো লাখো বছর।
এখন আর রুহানির কিছু ভালো লাগছে না। কি করবে হাওয়ায় ভাসতে ভাসতে অনেক দূর বলতে হাজার হাজার মাইল চলে গেলো। যেতে যেতে অনুভব করতে পারছিলো এখানে কেউ আছে। তার সাথে রুহানির কথা হলো এবার, অনেক কথা। লাখো বছর পর রুহানি পেলে অন্য এক রুহানিকে। এর আগে রুহানির সাথে যার অলক্ষ্যে কথা হয়েছিলো সে আবার হাজির। তার শব্দ শুনতে পাচ্ছে কিন্তু তাকে তো দেখছে না। যার সাথে রুহানির কথা হয়েছিলো সে বলছিলো আমাকে দেখা বা ছোঁয়া যাবে না। তাই রুহমানি দেখার চেষ্টা করছে না। এবার সেই না দেখা অবয়বকে রুহানি আলোছাঁয়া বলে সম্বোধন করলো। রুহানি বল্লো কে এসেছো আলোছাঁয়? অদেখা অবয়ব স্বীকার করে নিলো হ্যাঁ আমি আলোছায়া।
এবার রুগানিকে আলোছাঁয়া বলছে তোমাদের এখানে আর রাখা যাবে না। অন্য কোথাও তোমাদের যেতে হবে। এখানে থাকার সময় আর নেই। তুমি এসব জায়গায় লাখো লাখো বছর সময় পার করেছো। এর জন্য তোমাকে কিছু দিতে হবে না। এ সময়গুলো তোমাকে এমনি এমনি দেয়া হয়েছে। তবে এবার তোমারা যেখানে যাবে যেখানে সময় বেঁধে দিবো, তোমার যা মন চায় তাই করবে। আবার এখানে আসবে। কিছু পথ দেখাবো। সেখানে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা তোমার। যা খুশি তাই করতে পারবে। মনের মতো আকাশে-বাতাসে খেলা করবে। তোমরা যদি রাজি থাকো তাহলে নতুন জায়গায় যেতে পারবে। যাবে কি? তোমাকে কয়েকদিন সময় দিলাম, হিসেব-নিকেষ ও চিন্তাভাবনা করে রুহানি তুমি আমাকে জানিও। তুমি কিন্তু আমাকে এসব জায়গায় কখনো দেখতে পারবে না, শুধু অনুভব করতে পারবে। তবে কোনা কোন সময় আমাকে দেখতে পারবে। যদি তোমার চোখ আমাকে দেখার ক্ষমতা তৈরি করতে পারো। ইচ্ছে করলে তোমার চোখ সে ক্ষমতা অর্জন করতে পারবে। এসব নানা চিন্তাভাবনা করতে করতে রুহানির পথ আরো অনেক দূর এগুলো। মনে হচেছ যেন লাখো কিলমোটার পথ পারি দিয়েছে।
অনেক দিন গত হয়ে গেলো। রুহানির কাছে আর ঐ আলোছায়া আসছে না। একদিন হঠাৎ করে আলোছায়া এসে বলতে লাগলো ও রুহানি ও রুহানি। কি অবস্থা তোমার। তোমার সিদ্ধান্ত তো আমাকে জানালে না। রুহানি ভাবছে এসব জায়গা থেকে কি লাভ। নিজে নিজে কিছু করতে পারছিনা, খেতে পারছি না, স্বাধীনতা নাই, কাউকে দেখছি না। এসব জায়গায় আর থাকবো না? কোন কিছু যদি দেখতে না পাই, ভোগ করতে না পারি তা হলে এখানে থাকা আর না থাকা সমান কথা। রুহানি এবার আলোছায়াকে বলল্লো শর্তে আমি রাজি। আমাকে এখান থেকে বিদায় করে দিন। আলোছায়া রুহানিকে বলছে ঠিক আছে, তুমি তৈরি থেকো যে কোন সময় তোমাকে নতুন কোন জায়গায় পাঠিয়ে দেয়া হবে। সেখানেই তুমি থেকো আর আমার কাছে আসার জন্য অপেক্ষা করো! এই বলে আলোছায় যে চলে গেলো আর তার হদিস পাওয়া যায়নি।
অনেক দিন পর টের পেলাম। মহা বালুরাশির বিষ্ফোরণের শব্দ। আর রুহানি যেখানে থাকছে সেখানের অবস্থা নাজুক, মনে হলো সব কিছু একাকার হয়ে গেলো, কিছু আর টের পেলাম না। এই বিষ্ফোরণের তান্ডব ২ দিনের মতো অনুভব করেছে রুহানি। এর পর শান্ত শীতল পরশের ছোঁয়া মনে হলো তার। হঠাৎ করে একদিন রুহানি এই শান্ত পরিবেশে প্রবেশ করলো, কিভাবে এখানে আসছে তার কিছু মনে নেই তার। কয়েক হাজার পর রুহমানি আবার নতুন এক জায়গায় পদার্পন করলো। কিভাবে গাছের ফোকর দিয়ে বের হলো নিজে কিছু জানতে পারেনি। আস্তে আস্তে আলোবাতাস, পানি, আলো, মাটি এগুলোর সাথে তার পরিচয় ঘটলো। মজার কথা হলো রুহানি যে নতুন জায়গায় এসেছে এর আগের ঘটনা কিছুই তার জানা নেই। মনে হলো এখানে সে এই প্রথম এসেছে। এর আগে যে রুহানি লাখো বছর বিভিন্ন স্থানে থেকেছে তা সে জানেই না। অর্থাৎ বলা যেতে পারে রুহানি অনুভূতি নিয়ে এখানেই এই প্রথম এসেছে। আগের সময়গুলোতে তার কোন অনুভূতি, অবয়ব ও বস্তুজাতীয় কিছুই ছিলো না। শুধু ছিলো আফসা আফসা অনুভব।
কেমন জানি বিশালকার এলাকাটি একেবারে লন্ডভন্ড হয়ে একাকার হয়ে গেলো। এবার রুহানি এটাকে গ্রহ বলে সনাক্ত করলো। বড় হতে লাগলো রুহানি। বুদ্ধি বিবেচনা কিছুই নাই তার। খেতে ও ঘুমানোর অনুভূতি তার সৃষ্টি হয়েছে। এভাবে চলতে চলতে তার সাথে আরো অন্য এক রুহানি যোগ দিলো। লাখো বছর পর, লাখো রুহানির সৃষ্টি হলো, হলো বুদ্ধি বিবেচনা। বুদ্ধি বিবেচনার পরে তারা জানাতে পারলো। একদিন ফিরে যেতে হবে সেখান যেখান থেকে তারা এসেছিলো। রুহানির দলের লোকেরা এখন সেই মহা প্রলয়ের সময় দেয়া শর্তগুলো মিলিয়ে দেখছে এগুলো ঠিক না বেঠিক। এসব ভাবতে ভাবতে হাজার হাজার রুহানিরা পূর্বের জায়গায় ফেরত যেতে শুরু করলো। কেউ শর্ত মানছে কেউ মানছে না। এর মথ্যে কখন যে আবার মহা প্লাবন ঘটলো কেউ টেরই পেলো না। কোটি কোটি বছর পর সব রুহানিরা চলে গেলে সেই অনুভবের দেশে। যখন আসছিলো তখন যেভাবে দেখে আসছিলো রুহানিরা এবার সেরকম দেখছে না। কেমন জানি সব সাজানো গোছানো, পরিপাটি। রুহানি আসার সময় বলে আসছিলো আমি শর্ত মানতে রাজি আর সে শর্ত মেনেছে। তাই রুহানি মহা প্রলয়ের পর যেখানে গেলো সেখানে দেখলো তার জন্য রয়েছে ডান দিকে পাহাড়সম একটি টুনটুনি পাখির বাসা। অন্য সব বাসার রুহানিরা তাকে হাত নারিয়ে ডাকে এসো বন্ধু রুহানি। বাম দিকের রুগানিরা তাদের বাসা খুঁজে পাচ্ছে না। কেউ কেউ কেউ বলে ঐ যে সামনে গিয়ে দেখো তোমাদের জন্য বাসা আছে। অনেক খোঁজা খুঁজির পর বাসা পেলে তবে এর মধ্যে লাখো লাখো বছর কেটে গেলো। অনেকে বাসা খুঁজেই পায়নি। কি আর করবে হাটতে থাকলো হাটতেই থাকলো। যে দিকে তাকায় শুধু ধূসর বাতাসের আস্তরণ। মিজান রহমান (কল্প কাহিনী), ২৫.১২.২৪

সর্বশেষ - জাতীয়