ঢাকাসোমবার , ১৪ অক্টোবর ২০২৪

সংস্কৃতি ও কর্মসাধনার পরম্পরা

প্রতিবেদক
admin
অক্টোবর ১৪, ২০২৪ ৯:৫৩ অপরাহ্ণ

ডেস্ক রিপোর্ট: গুণীজনের জন্মদিনে শ্রদ্ধার অর্ঘ্য নিবেদনের প্রথাসিদ্ধ এক ধারা রয়েছে। তবে সে রকম কোনো কাঠামোতে সন্‌জীদা খাতুনের জীবন সাধনার পরিচয় তুলে ধরা দুঃসাধ্য, অথচ এমন পরিচয় প্রদান ছাড়া জন্মদিনে কীর্তিকথা ব্যক্ত করাও তো সম্ভব নয়। সম্ভব যে নয়, তার কারণ তিনি নিজেই তৈরি করেছেন, কোনো একক পরিচয়ে কিংবা বহুধা-বিস্তৃত বহুবিচিত্র কর্মের সংক্ষিপ্ত ফিরিস্তি দিয়েও মানুষটিকে বোঝা বা বুঝতে পারা সম্ভব নয়।

তাঁর প্রধান পরিচয় রবীন্দ্রসংগীতের সাধক হিসেবে, যিনি ছায়ানটের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও সুদীর্ঘকাল জুড়ে এর কাণ্ডারি এবং নির্মাতা। সেই সঙ্গে আমরা জেনেছি তাঁকে রবীন্দ্রসংগীতের পুরোধা ব্যাখ্যাতা হিসেবে, যেখানে তিনি অনন্য। সংগীতে পারঙ্গম শিল্পী তো বহুজন রয়েছেন, গুণী ব্যাখ্যাতাও মিলবে অনেক, তবে একই সঙ্গে সংগীতে সিদ্ধির উত্তুঙ্গ শৃঙ্গ-স্পর্শকারী ও গানের ভাবরূপ বিশ্লেষণ নবদিগন্ত-উন্মোচনকারী আর কেউ রয়েছেন কিনা সন্দেহ।

জীবনভর এমন যুগল-সাফল্যের পরিচয় রেখে চলা তো বিশাল অর্জন, তবে সন্‌জীদা খাতুন সেসব সাফল্য ও পরিচয়ে নিজেকে সীমিত রাখেননি, বহুতর ক্ষেত্রে বহুবিধ অবদান তাঁর। কেবল সাহিত্যের অধ্যাপক হিসেবে বিবেচনা করলেও তাঁর সমতুল্য খুব বেশি কাউকে পাওয়া যাবে না। তিনি পাঠ গ্রহণ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ও রবীন্দ্রনাথ-প্রতিষ্ঠিত বিশ্বভারতীতে, অধ্যাপনা করেছেন কলেজে এবং পরে সুদীর্ঘকাল বিশ্ববিদ্যালয়ে, ডক্টরেট উপাধি পেয়েছেন সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের ছন্দ বিশ্লেষণে নতুন মাত্রা যোগ করে, পোস্ট-ডক্টরাল করেছেন কবিতার ধ্বনি ও ভাবের দোলাচল বিষয়ে, যার অনেকটাই উচ্চারণ ও ধ্বনির বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ-নির্ভর। একই সঙ্গে তিনি কর্মবীর, সাংস্কৃতিক সামাজিক দায়-মোচনে আজীবন সংগ্রামী। অন্ধতার বিরুদ্ধে মানুষের অন্তর-জগৎ আলোকিত করার জন্য শিল্প ও সৃজনের সাধনা যেমন তিনি করছেন, তেমনি ব্যাপক সমাজকে নিয়েই চলেছে তাঁর এই বিরামহীন পথচলা।

সেই কবে, একেবারে স্কুলজীবন থেকেই শুরু হয়েছে এমন অভিযাত্রা, যা ষাটের দশকে ছায়ানটের মাধ্যমে হয়ে ওঠে পূর্ববাংলার সাংস্কৃতিক জাগরণের রূপকার। এরপরও আমরা দেখি কত না বিস্তার, জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের মাধ্যমে দেশের নানা প্রান্তে তিনি বয়ে নিয়ে গেছেন গান, শিল্পের জাদুকাঠির স্পর্শে সমাজকে আলোড়িত ও জাগ্রত করার প্রয়াস। আবার ছায়ানট ঘিরে গড়ে উঠেছে নালন্দার মতো বিকল্প শিক্ষাদান প্রতিষ্ঠান, ব্রতচারী দর্শন ও সমষ্টিগত নৃত্যধারা পুনঃপ্রবর্তনের লক্ষ্যে নিয়োজিত রয়েছে আরেক প্রতিষ্ঠান, চলছে অটিস্টিক শিশুদের জন্য সুর-ছন্দ ও রঙের-চর্চার ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। এর পাশাপাশি তাঁর সংগীত, সংস্কৃতি ও ইতিহাসচর্চার পরিচয়বহ গ্রন্থগুলোর ফিরিস্তি নিলে আমাদের বিস্ময়ের অবধি থাকে না।

সব মিলিয়ে একক পরিচয়ে কিংবা স্বল্পকথায় সন্‌জীদা খাতুনকে উপস্থাপন সম্ভব নয়। এই বিস্তারের আরেক উদাহরণ তাঁর নজরুল-চর্চা, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যা বিশেষ গতিমুখ অর্জন করেছে এবং হালে প্রকাশিত ‘নজরুল-মানস’ সেই পরিচয় বহন করে। রবীন্দ্রসংগীতের সাধকের নজরুল-চর্চা অনেকভাবে তাঁর জীবনের পরম্পরা তথা মনস্বী অধ্যাপক, মুক্তচিন্তার সাধক, পরিসংখ্যানবিদ পিতা কাজী মোতাহার হোসেনের উত্তরাধিকার বহন করে। কাজী মোতাহার হোসেন ছিলেন নজরুল-সুহৃদ, নজরুল এই প্রিয় বান্ধবকে সম্বোধন করতেন ‘মোতিহার’ হিসেবে। বাড়িতে যে গানের চর্চা চলত, সেই সূত্রে কিশোরী সন্‌জীদা খাতুনের গানের গৃহশিক্ষক ছিলেন নজরুল সংগীতশিল্পী সোহরাব হোসেন।

সর্বশেষ - জাতীয়