ঢাকামঙ্গলবার , ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

১৪০ বছরের ঐতিহাসিক কাঠের আলমারি বরিশাল বিভাগীয় জাদুঘরে হস্তান্তর

প্রতিবেদক
admin
ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২৫ ৪:৫৯ অপরাহ্ণ

বানারীপাড়া (বরিশাল) প্রতিনিধি: ঐতিহাসিক ও ১০০ বছরের পুরনো নির্দশন, আসবাবপত্র, ইমারত, স্থাপত্যশৈলীসহ নানা বিষয়বস্তু সেই সময়কার সংস্কৃতি, ধ্যানধারণা ও তাদের জীবনবৈচিত্র সম্পর্কে পুরো ধারণা নেয়া সম্ভব। এসব ঐতিহাসিক ও মুল্যবান জিনিসপত্র তাদের কথা স্মরণ করিয়ে দেয় নতুন নতুন প্রজন্মকে। স্মরণ করিয়ে দেয় তাদের জীবনবোধ ও কালচারকে। কথাগুলো বলেছেন, বরিশাল বিভাগীয় জাদুঘরের সহকারি কাস্টোডিয়ান আরিফুর রহমান।
গতকাল মঙ্গলবার ১৮ ফেব্রæয়ারি ১৪০ বছরের একটি জমিদারী আলমারি বরিশাল বিভাগীয় জাদুঘরে নেয়ার সময় তিনি আরো বলেন, আমরা এসব পুরনো ঐতিহ্য খুঁজে বেড়াই। এ আলমারিটি সংগ্রহ করতে পেরে আমরা আনন্দিত ও দাতাদের ধন্যবাদ জানাই। এই ঐতিহাসিকভাবে মুল্যবান আলমারিটি দান করেন চাখারের খলিসাকেটা নিবাসী মরহুম আব্দুল আজিজ ও মরহুমা আমিনা খাতুন-এর পরিবারের পক্ষ থেকে তাদের তৃতীয় পুত্র মাহবুব হোসেন লাল। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন গ্রামের গণমান্য ব্যক্তিবর্গ। উল্লেখ্য, মুন্সিগঞ্জ জেলার বিক্রমপুরে রাজা শ্রীনাথ রায় জমিদারি কার্যপরিচালনা করেন আনুমানিক ১৮০০ শতকের শেষ দশক থেকে ১৯০০ দশক পর্যন্ত। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের সময় কোলকাতা থেকে পুলিশের বড়বাবু ঢাকার টঙ্গিবাড়িতে আসেন এবং থাকেন ১৯৪৯ সাল পর্যন্ত। এসময় বড়বাবু লৌহজং থানায় কর্মরত থাকলেও এলাকাকে সবাই চিনতে বিক্রমপুর নামে। থানা ক্যাম্পাসেই তিনি পরিবার নিয়ে বসবাস করেন।
১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের সময় বৃটিশ বিদায় নেয়ার সাথে সাথে জমিদারী প্রথাও বিদায় হয়ে যায়, জমিদার আর জমিদার থাকলেন না। সবাই তখন আমজনতা। বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে, মুন্সিগঞ্জ জেলার বিক্রমপুরের জমিদার রাজা শ্রীনাথ রায় ছিলেন সবচেয়ে প্রভাবশালী এবং প্রজাবান্ধব। তিনি আনুমানিক ১৮০০ সালের শেষ দিকে বিক্রমপুরে রাজবাড়ি নির্মাণ করেন গ্রীক স্থাপত্যশৈলির আদলে। তার ভবনের ভেতরে জমিদারের পছন্দের ব্যবহৃত জিনিষপত্রের মধ্যে ছিলো-পালং, আয়না, টেবিল, কেদারা, আলমারি, বাসনপত্র, মন্দির, কাপড়চোপড়, উপহার সামগ্রী আত্মরক্ষার জন্য দেশীয় অস্ত্র। এছাড়া বাড়িতে ছিলো-বিশাল আকৃতির পুকুর, শানবাঁধানো ঘাট, বৈঠকখানা, মন্দির, হাসপাতাল, লাইব্রেরী, বিচারালয় ইত্যাদি। তিনি ছিলেন সৌন্দর্যের পুজারী ও এ অঞ্চলের শ্রেষ্ঠ জমিদার। রাজা শ্রী নাথ রায়ের জন্ম ১৮৪১ সালে এবং ১৯২৪ সালে ৮৩ বছর বয়সে নিজ গৃহে দেহাবসান ঘটে। এদিকে বিক্রমপুরের তার পরিবারের সর্বশেষ জমিদার যদুনাথ রায় জমিদারি পরিচালনা করেন দেশভাগের শেষ অবদি। দেশ ভাগের পর তার পৌষ্য ও আত্মীয়-স্বজন সবাই কোলকাতা চলে যান। যাওয়ার সময় তাদের ব্যবহৃত নিজিষপত্র নিলামে বিক্রি করে দেন। সেই সময় আব্দুল আজিজ দম্পতি শ্রীনাথ রায়ের ব্যবহৃত কাস্টমাইজ করা শৈল্পীক শিল্পকর্ম ও দুষ্প্রাপ্য এ কাঠের আলমারিটি ক্রয় করেন। ক্রয়কালে জমিদার যে ব্যবহার করতেন তার প্রমাণ ছিলো। সেসময় থেকেই আজ অবদি তার পরিবারের কাছে এটি জমিদারের স্মৃতি হিসেবে অতি যতেœ রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে আলমারিটির বয়স ১৪০ বছর।

 

 

সর্বশেষ - জাতীয়